বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২১

How to read a book a Day এর কলাকৌশল

হ্যাঁ, এটাও সম্ভব।আজ TED talk এ জর্ডান হ্যারি (Jordan Harry) এর বক্তব্য শুনছিলাম। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় কি জেনেছি জানেন? এই ভদ্রলোক মিনিটে ১,৫০০ শব্দ পড়তে পারেন। আমি শুনে রীতিমতো হা হয়ে রইলাম।

একজন সাধারণ মানুষ মিনিটে ২০০-২৫০শব্দ পড়তে পারে আর সেখানে কিনা ১৫০০?

উনার কিছু কথা বেশ ভালো লেগেছে,যে আমরা কেউই খারাপ পড়ুয়া নই বরং আমাদের পড়ার অভ্যাস খারাপ,আমরা রিডিং পড়তে চাইনা বা পড়িনা।ছোট বেলা আম্মু রান্নাঘর থেকে বলতো জোরে পড়বি যাতে আমি শুনতে পাই।আর সেই থেকেই রিডিং পড়ার প্রতি আমাদের অনিহা তৈরু হয়েছে। আমরা পড়লেও নিয়মিত পড়িনা তাই আমাদের পড়ার গতিও নেই।
তিনি তিনটি বদ অভ্যাসের কথা বলেছেন যা আমাদের পড়ার গতিকে কমিয়ে দেয় বা আমাদের মনোযোগ নষ্ট করে:

১) Sub vocalisation- Subvocalisation হচ্ছে আমাদের ছোট স্ব্র যা আমাদের ব্রেনের মধ্যে চলতে থাকে।যখন আমরা পড়ি তখন কিছু শব্দ আছে যা আমরা বারবার মনে করার চেষ্টা করি এবং এর কারণে আমাদের পড়ার মধ্যে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং আমরা তাড়াতাড়ি পড়তে পারি না।
এর থেকে উত্তরণের দুইটা উপায়ও তিনি বলেছেনঃ
১) ঠোটের উপর জিহ্বা টা রাখুন: টিপস টা অদ্ভুত হলেও কার্যকরী হতে পারে।এটা করলে কি হবে জানেন? আপনার মুখ থেকে বিড়বিড় করে শব্দ বের হবে না আর এর কারণে আপনার মাথায় যেই বারবার শব্দ ঘুরতে থাকে তাও হবে না। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
২)আপনার পরিবেশ: আপনার পরিবেশ আপনার পড়ার উপর চরম প্রভাব ফেলে।একলা চুপচাপ রুমে যতটা পড়া হবে, হই হুল্লোড় বা আওয়াজে পড়ার হার কমবে এটাই স্বাভাবিক।তবে বিজ্ঞানীদের মতে,হালকা মিউজিকে পড়া ভালো হয় এবং এটি মনেও থাকে।তাই লিরিক্স ছাড়া মিউজিক ছেড়ে পড়তে বসলে সেই পড়া মনেও থাকবে আর আপনার পড়তেও মন চাইবে।

২ নাম্বার বদ অভ্যাস- Regression বা পিছনে যাওয়াঃ কয়েকটা শব্দ পড়লাম আর মনে হইলো এরে প্রথম শব্দটা কি ছিলো জানি? কি এমন হয় না? অনেকেরই হয়।আর এটা আমাদের পড়ার গতি অনেক কমিয়ে দেয়। এর থেকে বের হওয়ার উপায় কি?
মনোযোগ বৃদ্ধি: শুধু পড়ে গেলেই যে হয়ে গেলো তা কিন্তু নয়।আপনাকে কিছু প্রশ্ন করে নিজেকে মনোযোগী করে তুলতে পারেন, যেমন:
★এই লেখাটা আমি কেন পড়ছি?
★এই লেখাটা পড়তে আমার কত সময় লাগবে?
★এই লেখাটা মুল বক্তব্য কি?
এই প্রশ্ন গুলো যখন নিজেকে নিজে করবেন তখন দেখবেন আপনার মস্তিষ্ক এই প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্যে একটিভ হয়ে যাবে এবং আপনি খুব সহজেই আপনার পড়ার মুল বক্তব্য খুজে পেয়েছেন।
স্যার লিয়া আপুর পোস্টে একটা কমেন্ট করেছিলেন এমন যে, আমি আসলেই অনেক দ্রুত পড়তে পারি এবং অন্যান্য অনেকের চেয়ে দ্রুত বুঝতে পারি যে এই পোস্টে আসলে কি বুঝাতে চেয়েছে। মুল মুল শব্দ গুলো খুব সহজেই আমি বের করতে পারি।
তো দ্রুত পড়ার গোপন রহস্য বুঝলেন তো?
ঢেকে রাখতে পারেন: কি ঢেকে রাখবেন?

বলছি বলছি,মনে আছে ছোট বেলা আম্মু যখন বলতো নিজেই নিজের পড়া নিতে? তখন কি করতাম? উত্তর টা ঢেকে প্রশ্ন টা দেখেই উত্তর বলতাম তাইনা?
ঠিক তেমনি পিছনের লাইন বা শব্দ যাতে আপনার পড়ার মাঝে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্যে আগে লাইনটা ঢেকে ফেলতে পারেন নতুন নতুন অবস্থায়।এখন মোবাইলে কেমনে ঢাকবেন সেটার বুদ্ধি আপনি বের করে নেন

৩ নাম্বার বদ অভ্যাস হলো- Fixation বা স্থায়ীকরণ: একজন সাধারণ পড়ুয়া ১০-১৫টা মুল শব্দ স্থায়ী করতে পারে মস্তিষ্কে আর এর কারণেই পড়ার গতি কমে যায়।মানে আমরা চাই পড়ার সাথে সাথে মনে করতে। এর কারণে আমাদের পড়ার গতির বারোটা বাজে।কিন্তু যখন একজন আসল পড়ুয়া পড়ে সে শুধু মুল শব্দের দিকে ফোকাস করে এবং তার পড়ার গতি ঠিক রাখে।এতে করে তার পড়ার গতিও কমেনা আর তার শব্দ মনে রাখতেও সমস্যা হয়না।
তো এই সমস্যা থেকে বের হবো কিভাবে?
জর্ডান ওনার বক্তব্যে বলেন, আপনার পেইজকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করুন এবং এই তিনটি ভাগের একটি একটি করে মুল শব্দ নির্বাচন করে পড়ে যান।যখন আপনি এই শব্দ খুজে বের করতে পারবেন আপনার পড়া মনে রাখা ও পড়া দুটোই গতিময় হয়ে যাবে।
তার শেষের কথাগুলো খুবই সুন্দর ছিল, তিনি দ্রুত পাঠ কে সুপার পাওয়ার এর সাথে তুলনা করেছেন।আসলেই একটি কথা চিন্তা করেন,আপনার এক বন্ধু বছরে একটা বই পড়ে বা মাসে একটা বই পড়ে আর আপনি সেই বই ৩দিন বা ৫ দিনে পড়েন।তার মানে তার একবার পড়তে পড়তে আপনার এই বই ১০বার পড়া হয়ে যাবে। বুঝতে পারছেন কেন সুপার পাওয়ার এটা?
আপনি পড়তে পড়তেই দেখবেন আপনার অভ্যাস গড়ে উঠেছে পড়ার প্রতি এবং আপনার পড়ার প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মেছে।তখনই দেখবেন আপনার আরো পড়তে ইচ্ছে করছে এবং আপনি ১০০জন থেকে এগিয়ে গেছেন।
তো শুরু হোক আজ থেকে দ্রুত গতির পড়াশোনা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন