ব্যক্তিগত উন্নয়ন শিক্ষায় আল কুরআন, ৫৭ সূরা
আলহাদীদ, আয়াত –০৪।
“আর
তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন তোমরা যেখানেই থাক না কেন। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা
দেখেন।”
আমরা যা কিছু বা যেকোন কাজ করি, আল্লাহ তা
দেখেন। একজন যদি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে কাজ করে আল্লাহ তার সঙ্গে
থাকবেন। তবে কাজের উদ্দেশ্য অবশ্যই সৎ হতে হবে।
আল্লাহ একজন পুরুষের সৎ কাজগুলো যেমন দেখেন
তেমনি অসৎ কাজগুলোও দেখেন। কিন্তু ফলাফল দুই ভাগে দেওয়া হবে। উভয় সৎ বা অসৎ কাজের
ফলাফলের এক ভাগ দুনিয়াতে এবং অপর ভাগ আখিরাতে দিবেন।
আল্লাহ সর্বদাই আমাদের সাথে আছেন। আমরা হয়ত
আমাদের দুঃখ, কষ্ট বা ব্যর্থতার কারণে, কুয়াশাচ্ছন্ন মনের কারণে আল্লাহর সঙ্গ
অনুধাবন করতে পারি না। তবে আমরা যত দুঃখে বা কষ্টেই থাকি আল্লাহ সর্বদাই আমাদের
সাথে থাকেন এবং আমাদের সাফল্যের পথ দেখান। এমনই এক ঘটনা আপনাদের এখন
জানাবো। যেখানে একজন পুরুষ আল্লাহর সাহায্য চেয়েছেন এবং আল্লাহ তাকে পথ
দেখিয়ে সাহায্য করেছেন।
হাসান (ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে) একটি
প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সাত সন্তানের একজন ছিলেন। তিনি তার পাঁচ বছর বয়স থেকেই
কাজ আরম্ভ করেন। নয় বছর বয়সে গরু চালনা শেখেন। সেখানে বিশেষ তেমন কিছুই ছিল না।
অন্যান্য কৃষকের সন্তানদের মতন সেও ভোরে উঠতো এবং কাজ আরম্ভ করতো। এই পরিবারগুলো
তাদের দারিদ্র্যতাকে নিয়তি বলে মেনে নেয় এবং উত্তম কিছুর জন্য কখনও চেষ্টা করেনি।
কিশোর হাসান অবশ্য একটি দিক দিয়ে তার বন্ধুদের
থেকে আলাদা ছিলেন। ইহা হচ্ছে তার অবিস্মরণীয় মা। তার মা তাদের সন্তানদের জন্য এই
দিন-আনো-দিন-খাও পরিস্থিতি কখনও মেনে নেননি। যদিও তিনি এই পরিস্থিতির মধ্য বড়
হয়েছেন এবং এখনো ইহার মধ্যেই রয়েছেন। তিনি অনুভব করতেন যে সেখানে নিশ্চয়ই কোন
ত্রুটি রয়েছে তাদের এমন দরিদ্র্য পরিস্থিতির জন্য। তিনি প্রায়ই তার সন্তানদের সাথে
তার স্বপ্নগুলো নিয়ে কথা বলতেন।
তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমাদের দরিদ্র্য থাকা
উচিত নয় এবং কখনই ইহা আমাকে যেন শুনতে না হয় যে আমরা দরিদ্র্য কারণ ইহা আল্লাহর
ইচ্ছা। আমরা আল্লাহর জন্য দরিদ্র্য নই। আমরা দরিদ্র্য কারণ তোমার বাবা কখনও ধনী
হওয়ার একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরী করেনি। আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে কেউই কখনই এমন একটি
আকাঙ্ক্ষা তৈরী করেনি।”
কেউই এমন একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরী করেনি।
এই ধারণাটি হাসানের মনে গভীরভাবে এমন প্রভাব ফেলে যে তার সমগ্র জীবনই বদলে যায়।
তিনি আরম্ভ করেন ধনী হওয়ার একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরী করতে। তিনি তার মনকে সেই
জিনিসগুলোর প্রতি মনোযোগী করতেন যা তিনি চান এবং সেই জিনিসগুলোর প্রতি অমনোযোগী
হতেন যা তিনি চান না। এইভাবেই, তিনি ধনী হওয়ার একটি জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা তৈরী
করলেন। দ্রুততম পথে অর্থ তৈরীর জন্য, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, কিছু বিক্রয় করতে হবে।
তিনি সাবান চয়ন করলেন। বারো বছর ধরে তিনি ইহা বিক্রয় করে চললেন, দরজা থেকে দরজা।
তারপর তিনি একদিন জানতে পারলেন যেই
প্রতিষ্ঠানটি তাকে সাবান দেয় সেই প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয়ের জন্য নিলাম করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় দাম হবে ৳১৫,০০,০০০। বারো বছরের বিক্রয় প্রতিনিধি রূপে কাজ করে, এক এক টাকা
সঞ্চয় করে, তার জমা হয়েছিল ৳২,৫০,০০০। তারপর তিনি একটি চুক্তি করলেন প্রতিষ্ঠানের
মালিকের সাথে যে তিনি ৳২,৫০,০০০ জামানত দিয়ে বাকি ৳১২,৫০,০০০ পরিশোধ করবেন পরবর্তী
দশ দিনের মধ্যে। চুক্তিতে শর্ত ছিল, তিনি যদি দশ দিনের মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধ
করতে ব্যর্থ হন তবে তার জামানত উঠাতে পারবেন না, তার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।
একজন সাবান বিক্রয় প্রতিনিধি রূপে ১২ বছর কাজ
করার সময়, হাসান অনেক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্মান এবং সুসম্পর্ক অর্জন করেন। আজ তিনি
তাদের কাছে গেলেন। তিনি ব্যক্তিগত বন্ধুদের কাছেও গেলেন এবং ঋণ প্রতিষ্ঠান ও
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হইতে অর্থ সংগ্রহ করলেন। দশম দিনের সন্ধ্যায়, তিনি সংগ্রহ
করেছিলেন ৳১১,৫০,০০০। তার এখনও ৳১,০০,০০০ কম ছিল।
পরবর্তী সময় তিনি সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে
বলেন, “আমার জানা মতন অর্থের প্রতিটি উৎস খুঁজে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তখন রাত হয়ে
আসছিল। রাতের আঁধারে আমি নির্জন একটি কক্ষে বসেছিলাম। আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম এবং
প্রার্থনা করলাম। আল্লাহর কাছে পথের সন্ধান চাইলাম এবং অনুরোধ করলাম যেন আমাকে এমন
একজন লোকের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয় যেন তিনি আমাকে এই সময় ৳১,০০,০০০ ধার দেন। আমি
নিজেকে বললাম যে আমি এই রাস্তা ধরে এগিয়ে যাব এবং রাস্তা শেষ হওয়ার আগেই আল্লাহ
আমাকে আলো দেখাবেন যাতে আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমি আল্লাহর কাছে
চাইলাম যেন তিনি সেই আলো তৈরী করে দেন এবং আমাকে দেখিয়ে দেন।”
তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সব দোকানই বন্ধ।
হাসান রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলছেন। রাস্তার শেষে তিনি দেখতে পেলেন এক ব্যবসায়ীর
দোকানে আলো জ্বলছে।
হাসান ভিতরে হেঁটে গেলেন। তিনি ব্যবসায়ীকে
দেখলেন এবং বুঝতে পারলেন যে তাকে সাহসী হতে হবে।
“আপনি কি ৳১০,০০০ আয় করতে চান?” হাসান সরাসরি
জিজ্ঞেস করলেন।
“জী, অবশ্যই।” ব্যবসায়ী বললেন।
“তাহলে আমাকে ৳১,০০,০০০ এর একটি চেক তৈরী করে
দেন এবং আমি যখন আপনাকে ইহা ফেরত দিবো তখন আপনাকে ৳১০,০০০ মুনাফা দিবো।” হাসান আরও
বললেন অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কথা যারা তাকে অর্থ ধার দিয়েছে এবং তার ব্যবসা
সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বললেন।
তারপর হাসান যখন সেই ব্যবসায়ীর দোকান থেকে বের
হলেন তার পকেটে ছিল ৳১,০০,০০০ এর একটি চেক। পরবর্তীতে, হাসান কেবল সেই
প্রতিষ্ঠানটিই ক্রয় করেনি, তিনি আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হয়েছেন, এগুলোর
মধ্যে ছিল চারটি প্রসাধনী সামগ্রী প্রতিষ্ঠান, একটি মোজা তৈরীর প্রতিষ্ঠান, একটি
ছাপাখানা এবং একটি সংবাদপত্র।
যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তার এই সাফল্যের
রহস্য কি। তিনি জবাব দেন, বহু বছর পূর্বেকার তার মায়ের উক্তিগুলো দিয়ে।
“আমরা আল্লাহর জন্য দরিদ্র্য নই। আমরা
দরিদ্র্য কারণ তোমার বাবা কখনও ধনী হওয়ার একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরী করেনি।
আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে কেউই কখনই এমন একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরী করেনি।”
তিনি বলেন যে, “আমি সর্বদাই জানতাম যে আমি কি
চাই কিন্তু আমি ইহা কিভাবে পাব তা জানতাম না। তাই আমি পথ দেখানোর জন্য আল্লাহর
কাছে সাহায্য চাইলাম এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন বিষয়ক বইগুলো পাঠ করা আরম্ভ করলাম।”
ব্যক্তিগত উন্নয়ন বিষয়ক বাংলা বইগুলো হচ্ছে – (১) নেপোলিয়ন হিলের চিন্তা করুন এবং
ধনী হোন, (২) উচ্চাকাঙ্ক্ষার ম্যাজিক এবং (৩) ডেল কার্নেগীর রচনাসমগ্র।
এইভাবে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জীবনে এগিয়ে যান
এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন।
তথ্য সহযোগিতায়:
১। আল কুরআন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন